হঠাৎ করে বাংলাদেশে লোডশেডিং বেড়ে গেছে ! তার পেছনের কারন কি ?
Suddenly load shedding has increased in Bangladesh! What is the reason behind it?
বাংলাদেশে আজ থেকে ১২ বছর আগে প্রচুর লোড শেডিং দিত । তখন দেশের চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হত অনেক কম । তখন গ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ চলে যেত সন্ধা ছয় টায় আর আসত রাত ১২ টায় । তারপর সরকার আসতে আসতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো শুরু করেছে এবং পাশাপাশি লোডশেডিং ও কমে গিয়েছে । এবং দেশ শতভাগ বিদ্যুৎ সম্পন্ন হয়েছে । কিন্তু এখন আবার কিছুদিন যাবৎ লোডশেডিং দেখা দিচ্ছে । লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনের কারণ কি সেই সম্পর্কে আলোচনা করব । সরকারের দাবি, বাংলাদেশ ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে । কিন্তু তারপরেও কেন সারা দেশে প্রচুর পরিমানে লোডশেডিং দেখা দিচ্ছে ? বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে দেশে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে । তাছাড়া জ্বালানি তেলের দাম ও বেশি । কিছুদিন আগেও প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ছিল ২৫ ডলার, আর এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩৮ ডলার । এই কারণে সরকার এখন প্রাকৃতিক গ্যাস কিনছে না । গত কিছুদিনে বাংলাদেশে গ্যাসের সরবরাহ ৩০ শতাংশ কমে গেছে । এই কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক কম হচ্ছে । তাই লোডশেডিং ও বেড়েছে বহুগুনে । জ্বালানীর মূল্য বৃদ্দির জন্য বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন দিনে ১০০ কোটির ও বেশি টাকা লোকসান গুনছেন । গ্যাস এবং তেল দ্বারা পুরোদমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্চে না ।
সে জন্য নিরুপায় হয়ে বেশি বেশি লোডশেডিং করা হচ্ছে । বাংলাদেশের তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন প্রেট্রোবাংলা বলছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট । সাধারনত প্রতিদিন গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয় । কিন্তু গত কিছুদিন ধরে প্রতদিন মাত্র ২৭৫-২৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে । কিছুদিন ধরেই ধাপে ধাপে সরবরাহ কমানো হচ্ছিল । নতুন করে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি না কিনা হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই । দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমান ও কাতার থেকে এলএনজি আমদানি সচল রয়েছে । পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এখন দেশে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি করার চেষ্টা চলছে । গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রান্না করার জন্য গ্যাস পাচ্ছে না । বেশ কিছু এলাকায় গ্যাসের চাপ অনেক কমে গেছে । তাছাড়া বিভিন্ন শিল্প কারখানা গুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে পন্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে । গ্যাসের অভাবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বিদ্যুৎখাত । পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় গ্যাসচালিত অধিকাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্দ রাখতে রয়েছে । তাই দিনে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে । এই জন্য বিদ্যুৎ বিতরন কম্পানি গুলো চাহিদা মত বিদ্যুৎ পাচ্ছে না । ফলে গত কিছুদিন ধরে দেশে লোডশেডিং বাড়ানো হচ্ছে । রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে ৫ বারের ও বেশি কারেন্ট চলে যাচ্ছে । গ্রাম অঞ্চলের অবস্থা আরো বেশি খারাপ । বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরন কম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড । দেশের প্রায় ৫৫% বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় পল্লী বিদ্যুৎ এর মাধ্যমে । এই সংস্থাটি দিনে ৮৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে । সেজন্য সারাদেশে লোডশেডিং করতে হচ্ছে । সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা গুলোতে । কোনো কোনো এলাকায় ১৪ ঘন্টার মত ও লোডশেডিং এর অভিযোগ ও রয়েছে । মোট কথায় জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে দেশে লোডশেডিং দেখা দিচ্ছে ।